
মুক্তির কণ্ঠ ডেস্কঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তিয়োরকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে গোবর ও কাঠের লাকড়ির স্তুপ পরে রয়েছে ।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে এখন আবার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসাথে খুলে দিয়েছে সরকার। কিন্তু উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা । উপজেলা থেকে দূরের বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষকরা থাকতে চায়না, তারা কোননা কোন ভাবে বদলি নিয়ে অথবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্যত্র সুবিধা মতো যায়গায় চলে যায়। যার ফলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের কোমলমতি শিশুরা। অনেক যায়গায় ঠিকমতো পাঠদান দিতে পারছেনা শিক্ষক স্বল্পতার কারনে। আর এইজন্য অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পরছে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই। কোন কোন বিদ্যালয় চলছে ২-৩ জন শিক্ষক দিয়ে।
গত (১৪ মার্চ) সোমবার সকালে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তিয়োরকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক নিয়ামত উল্লাহ কবির এর অফিসের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের কক্ষে লাকড়ির স্তুপ করে রাখা আছে। একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষক নিজেই লাকড়ি রেখেছেন এবং অন্য কক্ষে বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির হানিফ মিয়া নামের এক ব্যক্তি স্তুপ করে রেখেছেন। পূর্ব পাশের কক্ষটি তালা দিয়ে রাখা ছিল। প্রধান শিক্ষকের কাছে কক্ষের চাবি চাইলে তিনি প্রথম চাবি উনার কাছে নেই বলে অস্বীকার করেন সংবাদকর্মীদের কাছে। এক পর্যায়ে তিনি সহকারি শিক্ষক কে দিয়ে কক্ষটি খুলে দেয়।
বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির হানিফ মিয়া বলেন, লাকড়ি সব আমার না। পূবের পাশের রুমের লাকড়ি
হেড মাষ্টার স্যারের । আমার টি আমি সরাইয়া নিয়া জামু। স্যার স্কুলের গাছ কাইটা লাকড়ি বানাইয়া রাখছে বাড়িতে নিবার জন্য।
এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়ামত উল্লাহ কবির বলেন, ওই লাকড়ি আমার না এই গুলো পার্শ্ববর্তী বাড়ির। কক্ষ গুলো পরিত্যক্ত বিধায় তারা এগুলো এখানে রেখেছে। আমি তাদেরকে সরিয়ে নিতে বলেছি নিয়ে যাবে।
যখন বলা হয় যে আপনার ও আছে নাকি পূর্ব দিকের কক্ষে রান্নার কাঠ? তখন তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
অন্যদিকে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের গলানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী রয়েছে কিন্তু শিক্ষক নেই । বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সারে তিনশত। প্রধান শিক্ষক সহ ৩ জন শিক্ষক দিয়ে কোন ভাবে চলছে বিদ্যালয়টি । এখানে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে দুই জন রয়েছে ছুটিতে, একজন মাতৃত্বকালিন ছুটিতে অন্যজন অসুস্থতাজনিত কারণে। কিন্তু তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করাতে খুবই বেগ পেতে হচ্ছে। ওখানে শিক্ষক স্বল্পতার কারনে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের । এছাড়াও বিদ্যালয়ের ছাদে প্রায়ই মাদকসেবিদের আড্ডা থাকে বলে জানা যায় । মাদকসেবীদের কে ভয়ে কিছু বলার সাহস পায় না কেউ । আর শৌচাগারের অবস্থাও নাজুক। ব্যাবহারের আগেই ভিতরে টাইলস ভেঙে রয়েছে ফ্লাশ ট্যাংক নেই। শৌচাগারের পরিবেশ নোংরা, ব্যবহারের উপযোগী নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, উপজেলার সদরের প্রায় বিদ্যালয়েই, যেখানে ছাত্র ছাত্রী অনেক কম সেই বিদ্যালয়ে শিক্ষক ১০-১২ জন দেখতে পাবেন। উপজেলা সদরের আশেপাশের বিদ্যালয় গুলোতে সবাই থাকতে চায়। তারা প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়ে যেতে চায় না।
গলানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাহারুন্নেছা বেগম বলেন, আমার এখানে দুইজন শিক্ষক ছুটিতে রয়েছে একজন মাতৃত্বকালিন ছুটিতে অন্যজন অসুস্থতাজনিত কারণে। আমি সহ তিনজন মাত্র শিক্ষক, শিক্ষক স্বল্পতার কারনে ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদানে সমস্যা হয়। কমপক্ষে আরো দুইজন শিক্ষক প্রয়োজন বিদ্যালয়টি সুন্দর ভাবে চালাতে। বিদ্যালয়টির চারদিকে প্রাচীর দেয়া জরুরি তাহলে মাদক সেবীদের পদচারণা থাকবে না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, প্রধান শিক্ষকের কক্ষের পাশে রান্নার কাঠের স্তুপ রাখার বিষয়ে আমার জানা নেই খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর আমাদের অনেক যায়গায় শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। আমরা উর্ধতন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি।