
— — আমাদের জাতীয় মননের প্রতীক একুশের চেতনা। মিশে আছে বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে। আমাদের জাতি সত্ত্বার শ্রেষ্ঠতম পরিচয় বাহক অমর একুশের নেপথ্যে জড়িয়ে আছে।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ছয় মাসের মাথায় নবগঠিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নে গঠিত হয় ‘পাকিস্তান গণপরিষদ’। গণপরিষদ অধিবেশনে বাংলা ভাষার দাবি উত্থাপন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কৃতি সন্তান শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার দাবি আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্থাপন করেন ছিলেন সেদিন
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম সভায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর সংশোধনী প্রস্তাবটি দাখিল করেন। মূল প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, উর্দুর সাথে ইংরেজিও পাকিস্তান গণপরিষদের সরকারি ভাষা হিসেবে বিবেচিত হবে। একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদের তাঁর সংশোধনী পস্তাবে ২৯ নং বিধির ১ নং উপ-বিধিতে উর্দু ও ইংরেজির পর ‘বাংলা’ শব্দটি যুক্ত করার দাবি জানান।
তিনি যুক্তি উপস্থাপন করেন, পাকিস্তানের ৫টি প্রদেশের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলা ভাষাভাষী। সুতরাং বিষয়টিকে প্রাদেশিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাংলাকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে দেখা উচিত। তাই তিনি গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভূক্তির দাবি করেন। তৎকালীন পূর্ব বাংলা থেকে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলীম লীগ সদস্যরা বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে ছিলেন। ১১ মার্চ পাকিস্তান গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা উর্দু বিল পাশ হয়ে যায়।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত করাচীর অধিবেশন থেকে ঢাকায় ফিরে এলে, বিমান বন্দরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা তাঁকে বিপুল সম্বর্ধনা জানান। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত মূলত সেখান থেকেই।
অবশেষে ১৯৫০ সালে গণপরিষদে আরবি হরফে বাংলা লিখার প্রস্তাব উত্থাপিত হলে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তীব্র প্রতিবাদ করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে রক্ত ঝরে। ২২ ফেব্রুয়ারি এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদের অধিবেশন বয়কট করেন এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্বপ্নের বাংলাভাষা ৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রক্ত ঝরার মধ্য দিয়ে মাতৃভাষায় রূপ লাভ করে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের ১৯৫২ সনের এই আত্মত্যাগের দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
লেখা চলমান,,,,