
সাহিত্য-সংস্কৃতি, সামাজিক বা সেবামূলক কাজগুলো হচ্ছে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত। এ কাজগুলো করে ক্ষমতা অর্জন করা যায় না। টাকা পয়সা অর্জন করা যায় না। এ কথা জেনেও একদল লোক সাহিত্য-সংস্কৃতি, সামাজিক বা সেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে আজীবন জড়িয়ে রাখে তা নিছক আত্মতৃপ্তির জন্য। কিছু মানুষ অবশ্য ব্যতিক্রম, আর ব্যতিক্রম কোনো উদাহরণ হয় না।
যে যুগে মানুষ হন্য হয়ে টাকার পিছনে, ক্ষমতার পিছনে দৌড়ায়, সেই যুগে কিছু মানুষ মানুষের কথা ভেবে, দেশের কথা ভেবে, মানবতার কথা ভেবে, সাহিত্য-সংস্কৃতি সামাজিক বা সেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। এর জন্য আবার তাদেরকে চড়ামূল্য দিতে হয়। নিজের পরিবার, পরিজনকে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে, নিজেকে অনেক আরাম আয়েশ থেকে বঞ্চিত করে, একদল মানুষ এসবের পিছনে পাগলের মত ছুটে বেড়ায়। অতীতের সাথে বর্তমানের, বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের সেতুর বন্ধন ঘটায়। তারা আর কিছু না, সমাজের কাছে, দেশের কাছে, মানুষের কাছে কিছুটা প্রশংসা, কিছুটা সম্মান চান মাত্র। তারা চান মৃত্যুর পরেও মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করুক।
সমাজের জন্য কাজ করা এই মানুষগুলোকে আমরা মৃত্যুর পরে সম্মান দেওয়া তো দূরের কথা, যারা জীবিত আছে তাদেরকে দেখি অবজ্ঞা আর অবহেলার চোখে। সুযোগ পেলে দু-কথা শুনিয়ে দেই। সুযোগ পেলেই তাদের চলার মসৃণ পথটাকে কাঁটায় ভরিয়ে দিই। স্বার্থপরের মত নিজের জন্য কাজ করা লোকগুলোকে আমরা চালাক ভাবি আর দেশ-সমাজ-মানুষের জন্য কাজ করাকে ভাবী বোকা। অথচ এই মানুষগুলোই ইতিহাসে অমর হয়ে থাকে।