
মুক্তির কণ্ঠ ডটকমঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার এক যুবতী সৌদী আরবে শ্রম বিক্রি করতে গিয়ে এখন বাঁচার আকুতি। বাসা বাড়ির কাজের কথা বলে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে গরীব অসহায় নারীদের টার্গেট করে একদল অসাধু লোক। আমি লোক পাঠাই, সামান্য কিছু খরচ লাগবে। এমন প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে দরিদ্র পরিবারের অবিবাহিত এক যুবতি মেয়ে নাম তার সুরমা (২৫) । পরিবারে অভাব থাকবে না শুনে দালাল অহেদ মিয়ার প্রলোভনে পা দেয় অসহায় মেয়েটি ও তার পরিবার। ২০১৮ সালের শেষের দিকে অহেদ মিয়া ৫ হাজার টাকায় চুক্তি করে, সুরমার পরিবার ২ হাজার টাকা দেয়। ঢাকার এক ট্রাভেলস্ এজেন্সির মাধ্যমে অহেদ মিয়া সুরমাকে সৌদী আরবে বাসাবাড়ির কাজে পাঠায়। সুরমার এখন সেখানে বেঁচে থাকাই যেন বড় কথা।
সুরমার পাসপোর্ট নম্বর-ইএ ০০২৫৫২৮। আল-কাশিম জেলার আল-আরতাওয়াইয়া থানার আল সাভা গ্রামের আবদুল হামিদ চেপ মোতাইয়েরী বাড়িতে কাজ দেয়া হয় সুরমাকে। কাজের নামে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে সুরমা। অহেদ ও সুরমা উভয়ের বাড়ি ই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে ।
সুরমার মা হোসনা বেগম ও তার স্বজনরা জানায়, সুরমার প্রকৃত বয়স ১৫-১৬ বছর হবে। কিন্তু দালালসহ সকলে মিলে তার বয়স বাড়িয়ে জন্ম নিবন্ধন তৈরী করে। এরপর সৌদীতে পাঠিয়েছে সুরমাকে । সুরমাকে সৌদীতে নেওয়ার সময় অহেদ তাদের বলেছিল মাসিক বেতন হবে ১৮ হাজার টাকা । ৭ মাস পর মালিক মাত্র ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল সুরমার বাবার ব্যাংক হিসাবে । গত দেড়/দুই বছর ধরে সুরমাকে আর বেতন দিচ্ছেন না মালিক। উল্টো ওই যুবতির উপর অনেক কাজ চাপিয়ে দিচ্ছেন গৃহকর্তী। কাজ না করলে চলছে অমানুষিক নির্যাতন,খুবই কষ্টে আছে সুরমা। দিনরাত তিন বাসায় কাজ করতে হচ্ছে তাকে। দেশে আসার কথা বললেও তার উপর চলে শাররীক নির্যাতন। অনেক দিন হয়ে গেছে এখন আর টাকা পাঠায় না। সেখানকার মালিক মহিলা। বাসায় একজন বৃদ্ধ লোকও আছেন। ওই মহিলার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। মালিকের মেয়ে ও বোনের বাসায়ও সুরমাকে কাজ করতে হয়। তিন বাসায় কাজ করে আর কুলিয়ে ওঠতে পারছে না সে । শাররীক কষ্ট ও যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত ছটফট করছে। এরপরও টাকা দিচ্ছে না মালিক। মা বাবা সহ পরিবারের কারো সাথে সুরমাকে মুঠোফোনে কথা বলতেও দিচ্ছেন না । মাঝে মধ্যে গোপনে অন্যের ফোন থেকে সুরমা মা সহ অন্যদের সাথে কথা বলে। সুরমার মা হোসনা বেগম জানায় মুঠোফোনে সুরমার আকুতি-‘ মা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমাকে তোমরা কেমনে নিবা তাড়াতাড়ি নেও।
সুরমার এমন আকুতিতে হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে মা হোসনার। দালাল অহেদের কাছে বারবার ধরণা দিচ্ছেন তিনি । কিন্তু অহেদ কোন গুরূত্বই দিচ্ছে না। বিভিন্ন কায়দা কৌশল করে কালক্ষেপন করছে অহেদ।
স্থানীয় সালিসকারক, ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি অবগত করেছেন সুরমার পরিবার। আর দালাল অহেদ মিয়া মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ৩-৪ বার ঢাকায় নিয়েছেন তাদের । কিন্তু সুরমাকে ফেরত আনার ব্যবস্থা হয়নি আজও।
সুরমার মা হোসনা বেগম বলেন, ফ্রিতে তো কেউ বিদেশ নিতে পারে না। অহেদ কি আমার মেয়েকে বিক্রি করে দিল কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। এতদিন ঘুরিয়ে অহেদ এখন বলছে আর ২-৩ মাস সময় দাও, একটা ব্যবস্থা করে দিব।
অভিযুক্ত অহেদ মিয়া সুরমাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদী আরবে বাসা বাড়ির কাজে পাঠানোর কথা স্বীকার করে বলেন, সুরমার মা বাবার সম্মতিতেই পাঠিয়েছিলাম। সুরমাকে বেতন দেয়,তবে কম। জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে দেওয়ায় পাঠাতে পেরেছি, নতুবা সম্ভব হত না। আমার কি দোষ? সুরমাকে দেশে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা করছি। মাস খানেক পরে নিয়ে আসতে পারব।
গোকর্ণ ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহিন বলেন, এ ঘটনাটি আমার খুব একটা জানা নেই। তবে শুধু সুরমা কেন? কোন মেয়ে বা মহিলাকে বিদেশ পাঠানো উচিত না। এ ঘটনায় যে কোন সহযোগিতা দিতে বা করতে আমি প্রস্তুত আছি।